আমাদের অফিস
জাহাজ বিল্ডিং, পশ্চিম রামপুরা, ওয়াপদা রোড, রামপুরা, ঢাকা-১২১২
ইমেইল
ta@ta.com
ফোন করুন

নোটিশ

প্রথম পাতা

সফটওয়্যার খাতকে এগিয়ে নিতে সফটওয়্যার আমদানি বন্ধ করার দাবি

Jan 07, 2023

সফটওয়্যার খাতকে এগিয়ে নিতে সফটওয়্যার আমদানি বন্ধ করার দাবি

Image

করোনা মহামারির ধাক্কা লেগেছিল দেশের সফটওয়্যার খাতেও। অনেক প্রতিষ্ঠানের অর্ডার (সফটওয়্যার তৈরির কাজ) স্থগিত হয়। সেই পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানগুলো হিমশিম খাচ্ছিল। অনেক স্টার্টআপ (প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগ) প্রতিষ্ঠান তহবিল না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বাইরের অনেক গ্রাহক সফটওয়্যারে কাজ বাতিল ও বিল দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতি থেকে ২০২২ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে দেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরের প্রথম দিকে সেই ধারা ভালোভাবে বজায় থাকলেও শেষের দিকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুরু হওয়া ২০২৩ সালে সফটওয়্যার খাত কি এগিয়ে যাওয়ার ধারায় থাকবে?

 

স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমে গেছে

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘২০২২ সালের প্রথম ছয় মাস সফটওয়্যার খাতে ভালো সময় গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে শেষ ছয় মাস বেশ কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। ফলে সংকটে পড়ে সফটওয়্যার খাত।’ সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিকভাবে বাজে সময় পার করেছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমে গেছে।

ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ স্টার্টআপ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভারশীল। বছরের শেষ ভাগে স্টার্টআপে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে নতুন অনেক উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে।’

দেশের বেশির ভাগ সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের বৈশ্বিক মন্দার কারণে সফটওয়্যার রপ্তানি কমে গেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এ প্রভাব সম্পর্কে জানাতে গিয়ে ফাহিম মাশরুর বলেন, দেশের বেশির ভাগ কোম্পানি তাদের খরচ কমাতে গেলে সবার আগে তাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তির ওপর ছুরি চালায়। বছরের শেষে দিকে এই খরচ কমানোর ধাক্কাটি লেগেছে সফটওয়্যারের ব্যবহারের ক্ষেত্রে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও সফটওয়্যারের ব্যবহার কমেছে।


 

সফটওয়্যার আমদানি কমাতে হবে

সফটওয়্যার খাতের এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন ফাহিম মাশরুর। তাঁর মতে, সেটা বছরের হিসাব করলে ৩ থেকে ৫ বছর লেগে যাবে। সফটওয়্যার খাতে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা লাগবে। সরকারের নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার আমদানি করে। সরকার করোনার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে আমদানিকারক পণ্যের ওপর ডলারের ব্যয় কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সফটওয়্যার আমদানি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি কমিয়ে আনতে পারলে ডলারের খরচ কম হবে। একই সঙ্গে দেশের সফটওয়্যারশিল্পের উদ্যোক্তারাও এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে। ২০০ কোটির মধ্যে ১৫০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার স্থানীয় বাজার থেকেই পূরণ করা সম্ভব। বিদেশ থেকে মূলত অ্যাপ্লিকেশন ও ব্যাংকিং খাতের সফটওয়্যারেই বেশি আমদানি করা হয়। এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরিতে দেশের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোও দক্ষ। প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদেশে থেকে সফটওয়্যার আমদানি সীমিত করে দেওয়ার দাবি জানান ফাহিম মাশরুর।

বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘সফটওয়্যারশিল্প রপ্তানি একটা বড় বিষয়। ২০২২ সালে বিদেশের বাজারে প্রযুক্তিক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা জানানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছিলাম। আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশে তৈরি সফটওয়্যারের ৩৪ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এরপরই রয়েছে যুক্তরাজ্য (১৩ শতাংশ)। যদি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপকে যোগ করি তাহলে এ অঞ্চলে রপ্তানির পরিমাণ হবে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে ইউরোপ–আমেরিকার দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

বেসিসের হিসাবমতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৩০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বেসিস। রাসেল টি আহমেদের মতে, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের বাজারে ৩০ লাখ, যুক্তরাজ্যে ১০ লাখ এবং জাপানে সাড়ে ৮ লাখ মানুষের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে। রাসেল বলেন, ‘আমাদের এই বাজার ধরতে হবে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো দক্ষ জনবল থাকতে হবে। করোনার পর সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে সে ধারা বজায় ছিল। চলতি বছরের এ ধারা আরও জোরালো হবে। বিশ্বে আমাদের কাজের চাহিদা আছে, বিপরীতে আমাদের আছে জনবল। এই জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ২০২৩ সালে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সরকারের তথ্যমতে, রপ্তানিতে বিভিন্ন খাতের চেয়ে আমাদের খাত ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ এগিয়ে গেছে।’

 

দেশের ব্র্যান্ডিং প্রধান লক্ষ্য

২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হবে দেশের ব্র্যান্ডিংয়ে। রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে দেশের ব্র্যান্ডিং তৈরিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বেসিস সফটএক্সপো। এটি আগামী ২৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ২০২২ সালে যুদ্ধের কারণে সফটওয়্যার রপ্তানির একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের নাগরিকেরা এখন কাজ না করে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে প্রযুক্তি খাতে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বেসিসের সভাপতি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বর্তমানে যে দেশগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এখনো বাংলাদেশকে আইসিটি হাব হিসেবে চেনে না। আমরা বিশ্বের কাছে দেশকে চেনানোর কাজ শুরু করেছি। সে ধারা ২০২৩ সালেও বজায় থাকবে।’

তবে ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, ‘কোভিডের পর ঘুরে দাঁড়ানোর বছর ছিল ২০২২। কোভিডের আগে ২০১৯ সালের অবস্থানে আমরা এখনো ফিরে যেতে পারিনি। অনেকটাই পিছিয়ে আছি। আগের অবস্থানে যাওয়ার জন্য সফটওয়্যার খাতের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সভা হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেশের ব্র্যান্ডিং বাড়ানোর জন্য ২০২২ সালে কোনো আয়োজন ছিল না। স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যার বাজারজাত করার ঘাটতি ছিল। কোম্পানিগুলোর দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য সরকার ও বেসিসের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে অনেক প্রশিক্ষণ হয়েছে। এর সঙ্গে সফটওয়্যারও তৈরি করেছে। তবে এতে দেশের তেমন কোনো লাভ হয়নি।’
২০২৩ সালে সরকার ও সফটওয়্যার খাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন ফারহানা এ রহমান। দেশের ব্র্যান্ডিং না করলে অন্য দেশের সঙ্গে সফটওয়্যারকে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রশিক্ষণগুলো আবার চালু করতে হবে। করোনার কারণে দেশের প্রযুক্তি খাতের ক্ষতি হলেও অনলাইনের প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই ধারা করোনা কমে যাওয়ার পর চলমান রয়েছে। অনলাইন প্রশিক্ষণ ২০২৩ সালে আরও বাড়াতে হবে।


 

আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন

জাহাজ বিল্ডিং, পশ্চিম রামপুরা, ওয়াপদা রোড, রামপুরা, ঢাকা-১২১২

ta@ta.com

© Domain Name. All Rights Reserved. Design & Developed By One Point IT Solutions BD