অদম্য মেধাবী কৃষ্ণার ইচ্ছাশক্তির কাছে দারিদ্র্যের পরাজয়
অভাব-অনটনের কারণে একসময় মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন হেনা মণ্ডল। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ মেয়ে। তার লক্ষ্য লেখাপড়া শিখে সে শিক্ষক হবে। এমনও হয়েছে, অনেক দিন সকালে না খেয়ে বিদ্যালয়ে গেছে। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনার খরচ চালাতে কখনো নিজে বা কখনো মায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো কিছুই বাধা নয়, সেটি প্রমাণ করেছে সে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য মেধাবী কৃষ্ণা মণ্ডলের মা হেনা মণ্ডল আলাপকালে এসব কথা বলেন।
কৃষ্ণা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে সে শিক্ষক হতে চায়।
কৃষ্ণাদের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে। বাবা পরিতোষ মণ্ডল ও মা হেনা মণ্ডলের দুই সন্তানের মধ্যে কৃষ্ণা বড়। একমাত্র ছোট ভাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। কৃষ্ণাদের পরিবার একসময় সচ্ছল থাকলেও ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাবার চিংড়ির ঘের ভেসে যাওয়ার পর সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তারপর থেকে কোনো রকমে বেঁচে আছে পরিবারটি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্যাংকঋণ নিয়ে মাছের ঘের করেছিলেন পরিতোষ মণ্ডল। ঘের ভেসে যাওয়ায় ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে পরিতোষ আরও নিঃস্ব হয়ে পড়েন। স্ত্রী হেনা মণ্ডল একটি বেসরকারি সংস্থায় পাঁচ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। পাশাপাশি শপিং ব্যাগ সেলাই করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে বেসরকারি সংস্থার চাকরিটি চলে যায় হেনার। এরপর তাঁরা আরও অসহায় হয়ে পড়েন। তবুও সাহস হারায়নি কৃষ্ণা। বাড়িতে হাঁস পালন ও মায়ের শপিং ব্যাগ তৈরির কাজে সহযোগিতা করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
কৃষ্ণার মা হেনা মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে কৃষ্ণা লেখাপড়ায় ভালো ছিল। অভাবের কারণে একসময় লেখাপড়া বন্ধ করে দেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণা হাল ছাড়েনি। অষ্টম শ্রেণি থেকে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে নিজে পড়েছে। এসএসসিতে ভালো ফল করলেও ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তায় আছেন। তিনি মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে বিবেকবান মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
কৃষ্ণা মণ্ডল বলে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লেখাপড়ার ব্যাপারে তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। এইচএসসিতে সে শ্যামনগর সরকারি মহসীন কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তার ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। কীভাবে আগামী দিনগুলো চলবে সেই দুশ্চিন্তা ভর করে আছে।
নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণানন্দ মুখার্জী প্রথম আলোকে বলেন, কৃষ্ণা মেধাবী ছাত্রী। তার লেখাপড়ার ব্যাপারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা সহযোগিতা করেছে। লেখাপড়া করলে সে ভবিষ্যতে দেশের ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
© Domain Name. All Rights Reserved. Design & Developed By One Point IT Solutions BD